ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে পাউবোর জমি নিয়ে বেহাল অবস্থা

Coxs-Pic-08-06-16_1বিশেষ প্রতিবেদক:

কক্সবাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি নিয়ে হরিলুঠ চলছে। এক সময়ের কথিত ইজারাদার নামের ব্যক্তিরাই সরকারি বনভুমি জবর দখলের মত করেই গিলে খাচ্ছে এই সরকারি সম্পদ। কক্সবাজার উপকুলের জান-মাল রক্ষার জন্য ১৯৬০ সালের ভয়াল গর্কির পর থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ড উপকুলীয় এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহন করে। বর্তমানে কক্সবাজারে বোর্ডের রয়েছে ৫৯৫ কিলোমিটারের বেড়ি বাঁধ। এ পরিমাণ বাঁধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণই হচ্ছে ভাঙ্গা অবস্থায়। উপকুলীয় এলাকায় অধিগ্রহন করা কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৬ হাজার একর জমির মধ্যে বিপুল পরিমাণ জমি ইতিমধ্যে বেহাত হয়ে গেছে। তবে কি পরিমাণ জমি বেহাত হয়ে গেছে সেই হিসাব পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির রেকর্ড বইতেও নেই। এমনকি বোর্ডের নিজস্ব জায়গা-জমি নিয়ে নেই কোন তদারকিও। যেন এক প্রকার বেহাল অবস্থা কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি নিয়ে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব জমির ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সরেজমিন তদারকির ব্যবস্থা করা হলে বড় ধরনেরই ঘাপলার সন্ধান মিলবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। তার কারন হচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি-জিরাতের কোন সুনির্দ্দিষ্ট হিসাব-নিকাশ নেই। বাৎসরিক ইজারার মাধ্যমে আয়েরও পর্যন্ত হিসাব নেই। সংশ্লিষ্ট অফিসে ধর্ণা দিয়েও এ সংক্রান্ত বিস্তারিত কোন তথ্যও মিলেনি। অফিসটির অভ্যন্তরে এমনই অবস্থা যে-সেই ১৯৬০ সাল পরবর্তী সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক খন্ড জমি যিনি ইজারা নিয়েছিলেন সেই কথিত ইজারাদার এখনো বহাল রয়েছেন বটে। তবে তার দখলী জমির পরিমাণ এতদিনে বেড়ে গেছে কয়েকগুণ পরিমাণেরও বেশী। অথচ এতদিনেও সেই সরকারি জমি নিয়ে সরকারি খাতে কোন খাজনা জমা দেয়ারও হিসাব-নিকাশ নেই। মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারীরা যেমনিভাবে যখন তখন এদেশে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে সরকারী বন বিভাগের জমি জবর দখল করে বসতি স্থাপন করে বসবাস করতে পারে তেমনিই অবস্থা পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি নিয়েও। কোন বাঁধা নেই। নেই কোন তদারকির ব্যবস্থাও।

সরকারি নিয়ম মাফিক সন সন খাজনার বিনিময়ে সরকারি জমি বাৎসরিক ইজারার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সরকার যার নিকট থেকে খাজনার অংক বেশী পাবে তাকেই জমি ইজারা দেয়ার নিয়ম প্রচলন থাকে। কিন্তু কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষেত্রে এসবের বালাই নেই। টেকনাফ উপকুলের হ্নীলায় চার একরেরও বেশী পরিমাণ জমি একটি ভুমিহীন সমিতির নামে কমপক্ষে গত পাঁচ দশক ধরে এক ব্যক্তি ভোগ করে যাচ্ছেন। বাৎসরিক খাজনার নামে যৎসামান্য জমা দেখিয়েই এ পরিমাণ জমির ইজারা একই ব্যক্তির অনুকুলে দেয়া হচ্ছে দীর্ঘকাল ধরে।

শুধু তাই নয়। ইজারার চুক্তি ভঙ্গ করে রামু উপজেলার চাকমারকুলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে অবৈধভাবে স্থায়ী অবকাঠামো পর্যন্ত নির্মাণ করেছে খোদ ইজারাদার। এমনকি ইজারা চুক্তির সময় সীমা শেষ হলেও এখনো রাজস্ব বিহীন সরকারি সম্পত্তি ভোগ করছেন কথিত ইজারাদার কক্সবাজার সদরের পিএমখালী মহসনীয়া পাড়া এলাকার মৃত বাচা মিয়ার ছেলে নুরুল আজিম। সরকারী জমিতে বিনা অনুমতিতে অবৈধভাবে পাকা অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ রাখতে ওই ইজারাদারকে পানি উন্নয়ন বোর্ড চিঠি দিলেও বাস্তবে তারও কোন কার্যকারিতা নেই। অভিযোগ উঠেছে, কথিত ইজারাদার যখন পাকা দালান নির্মাণ করছে তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কোন বাঁধা দেননি। আর যখন পাকা দালানের নির্মাণ হবার পর লোকজন প্রতিবাদ জানাচ্ছে-তখনই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা লোক দেখানো একটি নোটিশ পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে।

খোঁজ খবর নিয়ে আরো জানা গেছে, রামু উপজেলার চাকমারকুল মৌজায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত প্রায় ২.৪০ একর জলাশয় সরকারি নীতিমোতাবেক পাঁচ বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয় উক্ত নুরুল আজিমকে। কিন্তু গত ২৩ জানুয়ারি পাঁচ বছরের এই ইজারা চুক্তির মেয়াদকাল শেষ হয়ে গেছে। ইজারা চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও এখনো বহাল রয়েছে উক্ত ইজারাদার। অথচ মেয়াদ কাল শেষ হবার পর নতুন করে জমি ইজারারও কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা। বরং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সেই চুক্তিভঙ্গকারী ইজারাদারকে যিনি সরকারি জমিতে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন তাকেই পূণরায় জমি ইজারা দেয়ার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ সরকারি এই জমিতে শর্ত ভঙ্গ করে নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধভাবে অবকাঠামো। এমনও অভিযোগ উঠেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে অবৈধ অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ নিয়ে বর্তমানে সরকারি এই জমি আত্মসাতের পাঁয়তারা করছে একটি মহল।

এছাড়াও এই জমির ইজারা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সম্প্রতি শফিকুল ইসলাম নামের একজন স্থানীয় লোক পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই জমি আরো বেশী টাকার খাজানায় ইজারা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এই আবেদনে সুপারিশও করেছেন স্বয়ং পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পেকুয়া- চকরিয়ার সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মহেশখালী- কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, নারী সংসদ সদস্য খোরশেদ আরা হক ও রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম। কিন্তু এরকম আবেদন পেয়েও বোর্ডের কর্মকর্তারা কোন সাড়াই দিচ্ছেন না।

এ বিষয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সবিবুর রহমান জানান-‘ রামুর চাকমারকুলের ইজারাদার নুরুল আজিম সরকারি জমিতে চুক্তি ভঙ্গ করে অবকাঠানো নির্মাণ করেছে এটা সত্যি। তার এই নির্মাণ কাজ বন্ধ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্প্রতি ইজারাদারকে চিঠি দিয়েছে।’ নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, ইজারা বাতিল করে সরকারি সম্পত্তিতে অবৈধভাবে জবর দখল করায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে শফিকুল ইসলাম নামের স্থানীয় একব্যক্তি এই জলাশয় ইজারা পাওয়ার জন্য আবেদন করার কথাও তিনি স্বীকার করেন। তবে সেই ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটা জানাতে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: